জিমেইল হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক ইমেইল সার্ভিস। এটাকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে এটা একেবারে আপনার জীবনের সাথে মিশে যেতে পারে। ব্যবহার শুরু করলে দেখবেন কিছুদিন পর এটা জীবনের অংশ বলে মনে হচ্ছে, এটা অবশ্য অ্যকটিভ ইউজারদের জন্য প্রোযোজ্য। আসুন দেখি কি আছে জিমেইলে, সবাই মোটামুটি জানেন কিন্তু তাও একবার চোখ বুলিয়ে দেখুন কোনটা বাদ গেল কিনা বা নতুন কিছু আছে কিনা। এ পর্বে আলোচনা করব জিমেইলের স্ট্যাবল ফিচারগুলো নিয়ে। আগামী পর্বে থাকবে পরীক্ষামূলক ফিচারগুলো।
স্টোরেজ: একেবারে শুরুতে জিমেইল সারা পৃথিবীতে হইচই ফেলে দিয়েছিল এর বিশাল স্টোরেজের কারণে। কারণ সেসময় ফ্রী ইমেইল সার্ভিসগুলো সর্বোচ্চ ১০০ মেগাবাইট স্টোরেজ দিত। আর জিমেইল শুরুই করে ১ গিগা দিয়ে, যা এখন ৭ গিগা। একটা ব্যাপার এখানে উল্লেখ্য যে জিমেইলের স্টোরেজ কিন্তু প্রতি মুহূর্তেই বাড়ছে। জিমেইল হোমপেজে গিয়ে দেখুন স্টোরেজ কাউন্টার ২৪ ঘন্টাই বাড়ছে। এই বৃদ্ধির হার কিন্তু আবার পরির্বতন হয়। যেমন ধরুন, ১২ অক্টোবর ২০০৭ এ বৃদ্ধির হার ছিল ঘন্টায় ৫.৩৭ মেগাবাইট। সাধারণত এত থাকে না।
সিকিওরিটি: জিমেইল অত্যন্ত সিকিওর। এর লগইন পেজ ১২৮ বিট SSL সিকিওর্ড। আপনি চাইলে পুরো জিমেইলেই এটি ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য সেটিংস থেকে Browser connection এ Always use https সিলেক্ট করুন। জিমেইল নতুন একটা ফিচার সম্প্রতি যোগ করেছে যার দ্বারা পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে পাসওয়ার্ড রিসেট কোড এসএমএসের মাধ্যমে পেতে পারেন। এতে আরও একটা সুবিধা হল অন্য কেউ যদি আপনার অ্যাকাউন্টের Forgot Password অপশন ব্যবহার করে, আপনি সাথেসাথে তা জানতে পারেন।
লেবেল: জিমেইলই মেইল দুনিয়ায় লেবেল ধারণার প্রর্বতক। অন্য মেইল সার্ভিসে ফোল্ডার তৈরী করে বিভিন্ন ক্যাটাগরীর মেইল আলাদা করা হলেও জিমেইলে লেবেলিং করতে হয়। ফোল্ডারের চেয়ে লেবেল সুবিধাজনক কারণ আপনি একটা মেইল কেবল একটা ফোল্ডারেই রাখতে পারবেন, কিন্তু লেবেলের ক্ষেত্রে একটা মেইলে আপনি যত খুশি লেবেল লাগাতে পারেন। ধরুন আপনার বন্ধু তার বিয়েতে আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাকে ইমেইল করেছে। আপনার হয়ত Friends, Important, Good News নামে তিনটা ফোল্ডার আছে। আপনার বন্ধুর ইমেইলটা তিনটা ক্যাটাগরীতেই পড়ে, আপনি কোন ফোল্ডারে রাখবেন? লেবেলের সুবিধা এখানেই, আপনি তিনটা লেবেলই লাগাতে পারেন মেইলটাতে।
ফিল্টার: জিমেইল ফিল্টারের মাধ্যমে আপনার ইনবক্স নিজেই অর্গানাইজড হয়ে থাকবে। আপনি আপনার বন্ধুদের ইমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে ফিল্টার তৈরী করতে পারবেন যেন তাদের কাছ থেকে আসা ইমেইল Friends লেবেলিং হয়। একইভাবে নেটের বিভিন্ন সাইট ও ফোরাম থেকে আসা মেইল, নিউজলেটার ইত্যাদির জন্য একটা ফিল্টার তৈরী করতে পারেন। কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন ফিল্টার তৈরী করার জন্য য়েমন TO:,From: , has:attachment, in:inbox, has the words ইত্যাদি। বিরক্তিকর কারও ইমেইল বারবার এলে সরাসরি Trash করতে পারেন। বিশেষ কারও কাছ থেকে আসা ইমেইল স্টার মার্ক করতে পারেন,এমনকি অন্য অ্যাড্রেসে ফরোয়ার্ডও করতে পারেন। আবার এমন অনেক মেইল আছে যেগুলো হয়ত আপনি এখন পড়তে চান না, কিন্তু পরে আপনার কাজে লাগতে পারে সেগুলো “Skip Inbox” ও “Mark as Read” সহ ফিল্টার করে আলাদা লেবেল করে রাখতে পারেন। তাহলে এগুলো আপনার অগোচরে জমা হতে থাকবে, আপনি টেরও পাবেন না। কিন্তু দরকারের সময় সার্চ করে সহজেই বের করতে পারবেন। যেমন আমি উইকিপিডিয়া, Bdnews24.com ইত্যাদির RSS feed subscribe করে ফিল্টার করে রেখেছি। এখন একটাও পড়ি না, কিন্তু পরে যদি কোন খবর বা কোন একটা কিছু জানার দরকার হয় তাহলে আমার আর বাইরে সার্চ করার দরকার নেই, নিজের ইনবক্স সার্চ করলেই হবে। নিজের একটা নিউজ ও তথ্য আর্কাইভ হয়ে গেল কোন ঝামেলা ছাড়াই!
বহুমুখী ঠিকানা: জিমেইলের আপনার অ্যাড্রেসটিকে আপনি নানাভাবে পরির্বতন করে নিতে পারেন। আপনার আইডি যদি [email protected] আপনি এটাকে [email protected], [email protected], [email protected] অর্থাৎ ডটটাকে যেকোন জায়গায় দিতে পারেন, এমনকি না দিলেও সমস্যা নেই, ইমেইল আপনার কাছেই আসবে। একইভাবে আইডির পরে য়োগ চিহ্ন ব্যবহার করতে পারেন ইচ্ছামত। ধরুন, সামহয়্যারে রেজিষ্ট্রেশন করার সময় দিলেন my.name+[email protected]। পরে ফিল্টার করার সময় to: my.name+[email protected] ব্যবহার করতে পারবেন। ফিল্টার করার সুবিধা ছাড়াও এর মাধ্যমে আপনি ধরতে পারবেন কোন সাইট স্পামারদের কাছে আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস বিক্রি করে কিনা। কোন স্পাম মেইল যদি দেখেন to:my.name+[email protected] বুঝবেন কালপ্রিটটা কে!!!
অন্য অ্যাড্রেস যোগ করা: জিমেইল ব্যবহার করে আপনি আপনার অন্য ইমেইল অ্যাড্রেস থেকে ইমেইল পাঠাতে পারবেন। Settings এর “Send mail as” অপশন থেকে যতগুলো খুশি ইমেইল অ্যাড্রেস যোগ করতে পারেন, কনফার্ম করতে হবে অবশ্য।
অন্য অ্যাকাউন্টেট মেইল পড়া: একইভাবে আপনার অন্য অ্যাকাউন্টের ইমেইল পড়তেও পারবেন জিমেইলে। Settings এর “Get mail from other accounts” এ গিয়ে অন্য কোন অ্যাকাউন্টের ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সেভ করুন। ব্যাস। ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এরকম যে আপনি জিমেইলই অন্য অ্যাড্রেস থেকে ইমেইল পাঠাতেও পারবেন, পড়তেও পারবেন। এই ব্যাপারটা আমি মেইল ব্যাকাপ রাখার কাজেও লাগাই। আলাদাএকটা জিমেইল অ্যাকাউন্ট খুলে সেটাতে আমার বর্তমান অ্যাড্রেসটা যোগ করে দিয়েছি। এখন আমার ইমেইল আপনাআপনিই ব্যাকাপ থাকে!
ফরোয়ার্ডিং: জিমেইল থেকে আপনি আপনার সব ইমেইল যেকোন অ্যাড্রেসে অটোফরোয়ার্ড করতে পারেন। এই সুবিধা ব্যবহার করে আমি দারুণ একটা কাজ করেছিলাম। সব মেইল ফরোয়ার্ড করেছিলাম গ্রামীণের cellemail.net অ্যাড্রেসে। cellemail.net এ কোন ইমেইল আসলে গ্রামীণফোন এসএমএস অ্যালার্ট পাঠাত । সব মেইল cellemail.net অ্যাড্রেসে ফরোয়ার্ড করার ফলে জিমেইলে মেইল আসলেও এসএমএস অ্যালার্ট পেতাম । এখন অবশ্য cellemail.net সার্ভিসটাই বন্ধ হয়ে গেছে ।
ফ্রী POP3 ও IMAP: জিমেইল POP3 ওIMAP ফ্রী দেয়। অথচ ইয়াহুতে এই সুবিধা পেতে হলে পেইড কাস্টোমার হতে হয়। POP3র সাথে IMAP এর প্রধান পার্থক্য হচ্ছে POP3র মাধ্যমে আপনি ইমেইল ক্লায়েন্ট বযবহার করে কোন মেইল ডাউনলোড করে সেটি পড়ুন, ডিলিট বা লেবেলিং যাই করুন না কেন আপনার ইনবক্সে তার কোন ইফেক্ট পড়ে না। কিন্তু IMAP তে আপনি লোকাল মেইল ক্লায়েন্টে যা করবেন ইনবক্সে সেটাই দেখাবে।
চ্যাট: জিমেইলের একটা অন্যতম বড় আকর্ষণ হল সরাসরি ইনবক্স থেকে চ্যাটিং করা যায়। এর জন্য আলাদা কোন সফটওয়্যার লাগে না। এমনকি সম্প্রতি তারা ভয়েস ও ভিডিও চ্যাটিং সুবিধাও দিয়েছে। এতেও ছোট একটা প্লাগইন ছাড়া কিছুই ডাউনলোড করা লাগে না।
থিম: আপনার ইনবক্সকে রাঙ্গাতে জিমেইলে রয়েছে ৩২ টি থিম। এই থিমগুলোর বড় বৈশিষ্ট্য হল এগুলো সময়ের সাথে সাথে বদলায়, ঠিক যেন জীবন্ত। যেমন ধরুন, টেবিলটপ থিমটির কথা। আপনার টেবিলে যেমন সবসময় একই জিনিস থাকে না, এই থিমটি চালু করলে আপনার ইনবক্সের এ কোণা ও কোণায় কলম, খাম, পেপার ক্লিপ, কাগজ পড়ে থাকতে দেখবেন। ৩২ টির কোনটিই যদি আপনার পছন্দ না হয় আপনি নিজেও কাস্টোমাইজ করতে পারবেন।
কিবোর্ড শর্টকার্ট: কিবোর্ড শর্টকার্ট ব্যবহার করে আপনি অনেক দ্রুত বিভিন্ন কাজ করতে পারবেন। কয়েকটি শর্টকার্ট হল,
নতুন মেইল লেখা: c
সার্চ: /
নতুনতর কনর্ভারসেশন: k
পুরোনতর কনর্ভারসেশন: j
কনর্ভারসেশন সিলেক্ট: x
কনর্ভারসেশন স্টার করা: s
লেবেল সরানো: y
স্পাম রিপোর্ট: !
মেইল ট্রাশ করা: #
পরের মেসেজ: p
আগের মেসেজ: n
রিপ্লাই: r
সবাইকে রিপ্লাই: a
ফরোয়ার্ড: f
আর্কাইভ করা: e
আনরিড মার্ক করা: U
রিড মার্ক করা: I
এগুলো আপনি নিজের ইচ্ছামত পরিবর্তনও করতে পারবেন তবে তার জন্য ল্যাব ফিচারের সাহায্য নিতে হবে। সে সম্পর্কে পরের পর্বে লিখব।
পরের পর্ব: অসাধারণ কিছু জিমেইল ফিচার: জিমেইল গাইড- পর্ব:২ (জিমেইল ল্যাবস)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:১৬